Saturday, November 29, 2014

প্রতিবাদ

পিছু হটতে হটতে দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে অনেক আগেই
দেয়াল ভেঙ্গে এখোনো পিছু হঠছি!
মারের ভয়, ক্ষুধার ভয়, অবস্থানের ভয় দেখিয়ে
তাড়া করে ফিরছে অহর্নিশ।
খুব বেশি তো চাওয়া ছিলোনা আমার!
একটু খাবার, বাসস্থান, পরিবার, একটু সুখ...
কাউকে না ঠকিয়ে, না বিরক্ত করে একটু পথ চলা
কি, খুব বেশী চাওয়া মনে হচ্ছে?
বিশ্বাস করুন, শুধু এটুকুই।
তাতেও সবার গা জ্বালা ধরে গেল?
অনেক দিন প্রতিবার না করেই থেকেছি।
আমিও এই পৃথিবীর একজন মানুষ
আমরো তে ইচ্ছে করে

বাঁচার মানেই যদি না থাকলো
তবে কথা বলে প্রতিবাদ করেই মরে যাবো বলে ঠিক করেছি।


অনেক দিন তো হল।
ভয় পেতে পেতে আমি এখন ক্লান্ত, বিরক্ত
এখন আমার বিশ্বাস জন্মেছে
আমার চলে যাওয়া মানে আমার ক্ষতির চেয়ে
আপনাদের ক্ষতিই বেশী।


29.11.14

Wednesday, November 26, 2014

বিশ্বাস



আমরা অবশ্যই তোমাকে আমাদের ঘাড়ের উপর দাড়াতে দেব
যখন জানব আমার ঘাড়ের উপরে দাড়িয়ে তুমি যে ফলটি পাড়বে তার থেকে আমরাও ভাগ পাবো।

আমি অবশ্যই আমার টুটি চেপে ধরার জন্য তোমাকে ক্ষমা করব যদি জানি আমার আমার কণ্ঠরোধকরে তুমি আমাকে বিষ থেকে বাঁচাবে।

অপরাধ নিও না! আজীবন দেখেছি তুমি আমাদের ঠকিয়ে নিজের পকেট ভরেছ। 
তোমাকে তাই তোমাকে বিশ্বাস করি কি করে বলো? বিশ্বাস অর্জন করা তো তোমার দায়িত্ব!

প্যারোডি



শরৎ বাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে
তোমার গফুর মহেশ এখন কোথায় কেমন আছে
তুমি জান না কি করছে তোমার সেই ছোট্ট আমিনা।।

বর্গিরা আর দেয়না হানা নেই তো জমিদার
ঘরে ঘরে হানা দেয় ওয়াইফাই আর ডিসের তার
আমেনা চ্যাটিং করে ফেইজবুক খুলে
চার পাচটা বয়ফ্রেন্ড পেয়ে গেছে বাপ ভুলে
ভাড়া বাসায় একাই থাকে, অতীত চেনে না।।

গেল বছর বিদ্রোহ হল এবছরে গুম
দেশের যত আমজনতা চোখবুজে দেয় ঘুম
খাবার দাবার সবই তাজা দিয়ে ফরমালিন
যতই খায় বাচার বদলে কমে আসে দিন
ক্যন্সারেতে ধুকছে গফুর সেবা মেলেনা।।

রাম বাবাজি ছাত্রলীগে দিয়েছে যে যোগ
বছর সাতেক আগে ছিলো বিএনপির লোক
রাস্তায় গরম করে চলে এফজেড দিয়ে
ভাল আছে সুখেই আছে গাড়ি বাড়ি নিয়ে
অল্প বয়সে এত কিছু? হিসেব মেলেনা।।

পার্বতি রাজনীতিতে এলো দেবদাস মরার পরে
চন্দ্রমুখীও হাটল সোজা সেই পথটিই ধরে
ভাগ করে চালায় তারা তোমার সোনার দেশ
ফুল ফ্যামিলি (চৈদ্দ গুষ্ঠি) বিলিয়নিয়ার আছে তারা বেশ
দেশ-বিদেশে বাড়ি গাড়ি অভাব বোঝে না।।

শরৎ বাবু এ চিঠি পাবে কি না জানিনা!!!

বিশ্বজিৎ স্মরনে

স্বার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
আগে মারলে জিতব আগে, হারব ভাবলে শেষে।
তোমার খুনী তোমার মাকেই হুমকি দেবে আবার
নেতা নেত্রী, থানা পুলিশ খুজবে তাদের খাবার
যা গেছে তা থাকনা, কেন অতীত ঘাটাঘাটি
অনেক নতুন ইস্যুর মাঝে, দাও তা চাপা মাটি
ভুলেই তো যাই আমরা সবাই, কেন মনে করাও?
ছেলে হারা মায়ের মনটি দুঃখ দিয়ে ভরাও?
বলবে আবার, মা কি ভোলে? সন্তানেরি কথা?
ভোলে না গো, চাপা পড়ে, দুঃসহ সেই ব্যাথা।
যদি আসে সে দুঃসময় ভাববে গিয়ে পরে
আগের মারটি আগেই দাও, না হয় যাবে মরে।

20.11.14

যুব সমাজ

তোমাদের দোষ নেই
তোমরা অসীম সম্ভাবনা নিয়ে জন্মেছিলে
জন্মেছিলে সজীব তরতাজা বহু তথ্য ধারন এবং বিশ্লেষনে সক্ষম মস্তিস্ক নিয়ে
সুস্থ সবল নিরোগ একটি দেহ নিয়ে
একটি রুক্ষ নিস্ফলা স্থানকে তোমরা প্রান প্রচুর্যে ভরে দিতে পারতে
সোনা ফলাতে পারতে, স্বর্গ বানাতে পারতে চোখের নিমেষে।

দোষ তোমাদের পুর্বসুরীদের
তারা তোমার জন্মদাতা নয়, সহোদর নয়, স্বজনও নয়
বিধাতার অপরুপ এক নিসর্গকে তারা
তোমাদের জন্য নরক বানিয়ে রেখেছেন।
এখানে তোমাদের সম্ভাবনা কে হত্য করা হয় সুকৌশলে
তোমাদের মস্তিস্ককে তৈরি করা হয় মানব বোমায়
যে হাতে তোমরা কাজ করবে,
সে হাতে তোমারা নিজেরা নিজেদের বিকলাঙ্গ কর
নিজের ভাইকে হত্য কর
নিজের মা’কে সন্তানহীণ কর।
তোমাদের অনুভুতিকে রুপান্তর করা হয় ইচ্ছেমত
অর্থের লোভ, ক্ষমতার লোভ, জৈবিক লোভ
সকল লোভকে জাগিয়ে তোলে তারা
তোমরা ছোট, ছুটতেই থাক আমৃত্যু,
কিন্ত, সবকিছুই থাকে অধরা।
কি জানি হয়তো একদিন সবই ঠিক হবে
ততদিনে হয়তো ছুটতে ছুটতে
তোমাদের অস্থি মজ্জা সবই ক্ষয়ে ক্ষয়ে মিশে যাবে মাটিতে
কিন্ত তোমাদের উত্তরসূরীরা?
তারা কি তোমাদের ঘৃনার চোখে দেখবে?
নাকি করুনার চোখে দেখবে?

23.11.2014

মুক্তিযোদ্ধা

পালিয়ে যাইনি,
অসহ্য শুণ্যতা, নিকষ কালো অন্ধকার, নিস্তব্ধতা, নিসঙ্গতা,
সহ্য করেছি।
কোন খাবার ছিলোনা, বিশ্রামের জায়গা ছিলোনা,
ঘুমের শান্তি ছিলোনা, নিরাপত্তা ছিলোনা
সবকিছু সহ্য করেছি।

সবচেয়ে আপন যে পরিবার,
তাদের সবাইকে রক্ষাকরার দায়িত্ব ছিলো আমার একার,
অবহেলা করেছি।
যার চোখে পানে চেয়ে কাটিয়ে দিতে পারতার দুই চারটা জীবন।
কত ছোট ছোট সপ্ন থাকে মানুষের!
সংসার, সখ, খাওয়া-দাওয়া, আদর পাওয়ার ইচ্ছে, আদর করার ইচ্ছে;
আমারোতো ইচ্ছে করতো, আর সবার মত......
মনে হয়, কিছু কিছু মানুষের রক্তে কিছু একটা আছে।
না পারে এড়িয়ে যেতে, না পারে চোখ বুজে থাকতে
বুকে পাথর বেঁধে, সব ফেলে এসেছি।
পারতাম; ক্ষমতাসীনদের খাতায় নাম লিখিয়ে
পরিবার, আত্মীয় স্বজনদের সাথে সুখে থাকার স্বপ্ন দেখতে
সুযোগও ছিলো.......
কিন্ত যখন, দুখু ময়রার দোকানে আগুন দেখেছি,
আলম মুদির মেয়েকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে দেখেছি,
ক্যন্টনমেন্টের ভিতরে, মানুষের আর্তনাদ শুনেছি
নর্দমায় অগনিত লাশ পঁচতে দেখেছি
চুপ করে বসে থাকতে পারিনি..
বেড়িয়ে গেছি রাতের অন্ধকারে, অনিশ্চয়তার পথে, সবকিছু ছেড়ে
শুধুমাত্র, সবাইকে নিয়ে ভাল থাকার আশায়।
এটাকে কি নিজে-নিজে, একা-একা ভালো থাকার ইচ্ছে বলা যায়?
আজ দিন বদলেছে
আমরাই জিতেছি শক্তির জোরে,
এখন যেদিকে তাকাই, সবই আমাদের
গায়ের জোর আর তেমন নেই, মনে হয় দরকারও নেই
নতুন প্রজন্ম আসছে, তারা সবই একসাথে কাজ করবে,
সোনা ফলাবে, উন্নয়ন করবে
আমরা সবাই মিলে তা উপভোগ করব।
কিন্ত হঠাৎ একদিন দেখি
তখনকার ক্ষমতাসীনদের দলের লোকজনের তালিকাটির মত
আমাদেরও একটি তালিকা হচ্ছে
সেই আলম মুদি, দুখু ময়রা, অসংখ্য নির্যাতিত মানুষের সাথে
আমার পার্থক্য করার জন্য।
যদি কখোনো ওরা ক্ষমতায় আসে,
তালিকা ধরে যেন ওরা প্রতিশোধ নিতে পারে তার জন্য?
সেসবে কখোনো ভয় পাইনি, এখোনো পাই না-
কিন্ত, মনে করতে পারি না; আমি কি এই চেয়েছিলাম?
স্বাধীন দেশে আমার এবং আমার উত্তরসুরীর জন্য একটা সার্টিফিকেট?
আমাদের সন্তানের তো সব আছে, হাত পা, মেধা, বুদ্ধি সব,
উপরন্তু একটি স্বাধীন দেশ, সুজলা সুফলা শস্য শ্যমলা দেশ।
আজ যদি এদেশের কোন সাধারন নাগরিক আমার দিকে আঙ্গুল উচিয়ে বলে,
“আমাদের জন্য যুদ্ধ করে উনি আমাদের অধিকারের উপর অগ্রাধিকারের থাবা বসিয়েছেন”
যদি কেউ প্রশ্ন করে “ আপনারা কোনটা চান? সম্মান না অগ্রাধিকার”
আমি কি উত্তর দেবো?
যদি তারা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে?
তাহলে এই লজ্জার দায়িত্ব কে নেবে?
24.11.2014

“রাক্ষুষে ক্ষুধা”


এলো তারা, প্রবলেমে পড়ল বসুধা
পেটে করে নিয়ে এলো রাক্ষুষে ক্ষুধা।
জমি, খাল-বিল খায়, খায় নদী নালা
যত খায় ক্ষুধা বাড়ে, বাড়ে তার জ্বালা
সুদ খায় ঘুষ খায়, খায় ডোনেশন
বকশিশ, চাঁদা? এতে ভরে নাতো মন
পার্সেন্টেজ, আছে তদবির ফিস
একেবারে না’র চেয়ে হোক ভরা ডিস
রক্ত মাংশ সহ জৈবিক দেহ
খায় ওরা সপ্নও, দেখে যদি কেহ
ভরসা, আশা, মান সম্মানও খায়
তিল হোক তাল হোক যখন যা পায়।


ক্ষুধার পেছনে তারা দিন রাত ছোটে
পারে তো দেশটা খায় পেটে যদি আটে।

26.11.14

“জনক”


ছোট বেলা থেকেই
বাবা মায়ের কোন খবর নেই।
আবছা আবছা মনে পড়ে মায়ের কথা।
চৈত্রের গরমে, আচলদিয়ে আমার মুখ মুছিয়ে দিচ্ছেন।
কেমন যেন একটা গন্ধ, মায়ের,
সেজন্যই মনে হয় তরকারি আড়ৎতে
পচা তরকারির ঘ্রানকে এত আপন মনে হয়, মায়ের কথা মনে পড়ে।

মার খাওয়ার প্রথম দিনের কথা মনে আছে
আগের রাতে খাবার জোটেনি, খুব সকালেই ক্ষুথার জ্বালায় ঘুম ভেঙ্গে যায়
আড়ৎ এর ভিতর ঢুকে দুইটা বেগুন লুঙ্গির ভিতর ঢুকাতেই
উত্তরাঞ্চলের সেই মোটা তাগরা ব্যাপারিটা দেখে ফেলে
আর যায় কোথায় ঘন্টা খানের মার,
তারপর খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে আমাকে।
মারের ব্যাথার চেয়ে ক্ষুধার জ্বালাটাই তখন বেশী জানান দিচ্ছিলো।
শেষমেশ, স্যার যখন এলেন বাজারে, তখন আমাকে ছাড়ালেন
খুবই দয়ার সাগর এই স্যার
আসলেই বাজারে যেন, সালামের একটা হিড়িক লেগে যায়
যে যেখান থেকে পারে সারের ব্যাগ ভর্তি করে দেয়
স্যারের ব্যাগ টেনে দিয়েছিলাম, গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসার সময়
উনি বিশটা টাকা দিলেন,
সেটা দিয়েই পেটের জ্বালাটা কমালাম সেদিন।
তারপর কত দিন, কত বছর কেটে গেল
ছিচকে চুড়ি থেকে, চুড়ি, ছিনতাই, বাটপারি সব অভিজ্ঞতাই হয়েছে।
জেলেও গেছি দুএকবার।
মাঝে মাঝে স্যার এর বাসার সামনে গিয়ে স্যারকে দেখি
জমকালো একটি গাড়িতে চড়েন, সাথে পুলিশ আরো অনেক লোক
লোকটি জন্য একরকম মায়া আমার।
দেখলেই বড় আপন মনে হয়।
বাবার কথা মনে হয়।
বাবাও তো এমন একজন হতে পারতো!
তাহলে তো, খেয়ে না খেয়ে, যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে,
লোক জনের লথিগুতো খেয়ে বড় হতে হত না।
নিজেকে বোঝাই, কপাল, কপাল।
দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়-
অনেক কলকৌশল শিখি
অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি, পেট চালানোর জন্য
এখোনো ঘুমাই, এখানে সেখানে।
এর মধ্যে, একদিন ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়লাম
আজকাল আর লোকজনের আগের মত মায়া নাই
যে যেখান থেকে মারে
যেখানে খুশি সেখানে মারে
যা দিয়ে খুশি মারে।
গন ধোলাইর একটা মজা আছে
প্রথম এক মিনিট টের পাওয়া যায়
তার পরেরটা আর তেমন গায়ে লাগেনা।
কতক্ষন মার খেয়েছি জানি না
হুশ আসতে দেখি- হাসপাতালে আছি
থানা, পুলিশ, জেল দুই তিন বছর শেষ।
আবারো রাস্তায়।
পুরোনো কাজ ভাল লাগে না
জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা
ধরা পরার ভয় মারের ভয়
কিন্ত পেটের ক্ষুধা!!
অনেক দিন স্যারকে দেখিনা
সেদিকে হাটা শুরু করলাম।
আমি জানি না, তিনি কি আমাকে চেনেন?
চেনার কথা না।
চেনার দরকার ও নেই। এটা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত অনুভুতি।
বাসাটা খালি খালি মনে হচ্ছে
দারোয়ান নেই, গেট বন্ধ
মনেহয় কোথাও বেড়াতে গেছেন।
সামনের চায়ের দোকানে বসলাম
এককাপ চা এবং একটি সিগারেট নিতে নিতে
ঐ বাসার কথা জিজ্ঞেস করলাম
স্যারের কথা জিজ্ঞেস করলাম
দোকানদার আমাকে চেনে, আমি এখারে বহুবার এসেছি
ও বলল ”তোমার স্যারে তো দুর্নীতি করে ধরা খাইছে, জেলে আছে”
তার পরিবার গ্রামে চইলা গেছে।
হঠাৎ মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভুতি হল
স্যারকে আরো বেশী আপন মনে হতে লাগল
তিনি আমার, আমাদের, সত্যিকারের জনক।
২৬.১১.১