সাদা কাপড় এসে
পড়েছে
গরম পানি, বড়ই
পাতা, সাবান, ব্লেড, আগর বাতি, কর্পুর সব এসেছে
মসজিদের ইমাম
মুয়াজ্জিন সবাই প্রস্তত।
গ্রামের প্রায়
লোকজন ভীড় করেছে চারপাশে, বিভিন্ন মানুষের মুখে বিভিন্ন কথা-
- আহা বড় ভাললোক
ছিলো!
- হ, দেখলে এমন
ভাবে কথা কইতো যেন কত দিনের আপন
- আহারে! মরনের
সময় কেউ কাছে ছিলো না
- না না পাশের
বাড়ির আমিনা ছিলো, মুখে পানি দিছে
- মাইয়া তো একটা
বিদেশ থাকে হে আইবো না?
- মনে হয় না,
দেশে যে তিন জন আছে তারা পথে।
- মাইয়া পোলা
সবাইরে ভাল জায়গায় পড়াইছে, কাউরে কষ্ট করতে দেয় নাই
- এই গ্রামের
বেশিরভাগ জমিই তার, গ্রামের প্রায় সব গরীব লোকই তার বাড়িতে, তার ক্ষেতে কাজ করে।
- তোমার মনে আছে,
তার বাপে ছিলো এই গ্রামের প্রাইমারি ষ্কুলের মাস্টার
- হ হ দেকছি না,
ঐ যে দালানাডা, ওই খানেই তো একটা দোচালা টিনের ঘর ছিলো। আর জমি বলতে ছিলো পুবকান্দার
দেড় একর ধানি জমি।
- পোলাডা আছিল
পড়াশুনায় ভালো, সব পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট।
- আমার আমার এহোনো
মনে আছে যে দিন মেট্রিক পাস দিল, মাস্টার সবাইরে মিষ্টি খাওূয়াইছিলো। কিজানি কয় “হায়ার
ফাষ্ট ডিভিশন”
- ভা্র্সিটিতে
পড়াইতে পড়াইতে দেড়বিঘা শেষ
- হ হুনছি চাকরী
পাইতেও টাকা দেওন লাগছে।
- মানুষটা বড়
ভাল ছিল। আগে ছালাম দেওন যাইতো না। সবাইরে আগে ছালাম দিতো।
পাশ থেকে ওপাড়ার
গোয়ার যুবক নিচু স্বরে বলে ওঠে-
আছিলো
তো তৃতীয় শ্রেনীর সরকারী কর্মচারী এত টাকা পাইলো কই। হুনছি ঢাকায়ও ২ডা বাড়ি আছে।
অপ্রস্তত হয়ে
নড়ে চড়ে বসে মুরুব্বিরা।“আর একটা বরফ নিয়া আয় আগেরটা তো শেষ, খেয়াল করবি না?
যুবকটি ছূটে চলেযায়
আর একটি বরফ আনতে। অল্প সময়ের মধ্যে নিয়েও আসে আর একটি।
চলছে কোরআন শরীফ
পাঠ। আগরবাতির সুগন্ধ উঠোনের বাতাসে।
ঝকঝকে রোদ, ফাগুনের
বাতাস বইছে ধীরে।
বাড়ির ভেতর থেকে কান্নার শব্দ গুনগুন করে বাঁজছে।
আশেপাশে ভীড় করেআছে
গুনমুগ্ধ, কৃতজ্ঞ মানুষ, সবার মুখে বেদনা ছায়া।
উঠোনের মাঝে,
মসজিদের খাটটির উপরে লাশ অপেক্ষমান।
যুবকটি মায়া হয়
মৃত লোকটির জন্য, সে ভাবে..
“হয়তো পরজনম আছে,
থাকলে লোকটির পুরো পরজনমটাই বরবাদ।
কৈফিয়ত এবং শাস্তি
অফুরান জমা হয়ে আছে।
টাকা আছে অনেক, কিন্ত ওপারে তো ঘুষও চলেনা।